শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ০৭:২৬ অপরাহ্ন
আর্ন্তজাতিক ডেস্ক : শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে ইতোমধ্যে। তারল্য সংকটের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও। রাজধানী কলম্বোয় পরীক্ষার খাতার কাগজ ফুরিয়ে যাওয়ায় দেশটির পশ্চিম প্রদেশের লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বন্ধ হয়ে গেছে। মূলত তারল্য সংকটের কারণেই কাগজের ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে দেশটিতে।
শ্রীলঙ্কার শিক্ষা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আগামীকাল সোমবার (২১ মার্চ) থেকে শুরু হতে যাওয়া এক সপ্তাহের নির্ধারিত পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। কাগজের সংকটের কারণে বাধ্য হয়ে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ১৯৪৮ সালে দেশটির স্বাধীনতার পর সবচেয়ে ভয়াবহ আর্থিক সংকটের কবলে পড়েছে শ্রীলঙ্কা।
পশ্চিমাঞ্চলীয় শিক্ষা বিভাগ জানিয়েছে, দেশের স্কুলগুলোর অধ্যক্ষরা কোনও অবস্থাতেই পরীক্ষা নিতে পারবেন না। কারণ কাগজ ছাপানোর জন্য যেই অর্থের প্রয়োজন তা নেই।
নবম, দশম এবং একদাশ শ্রেণীর পরীক্ষাগুলো বছরের শেষ দিকে নেওয়া হয়ে থাকে। শিক্ষার্থীদের পরবর্তী গ্রেডে উন্নীত করা হবে কিনা এর মূল্যায়ন হয়ে থাকে।
গত সেপ্টেম্বরে অর্থনৈতিক জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে। এর ফলে মৌলিক খাদ্যপণ্য সরবরাহের নিয়ন্ত্রণ ও বাড়তে থাকা মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের সুযোগ পায় সরকার। জানুয়ারিতে দেশটির মূল্যস্ফীতি ১৪.২ শতাংশে পৌঁছায়। দক্ষিণ এশীয় দেশটির পর্যটন খাত থেকে আসা ডলারের প্রবাহ কমে গেছে মহামারিতে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর আগে থেকেই শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণ সর্বোচ্চ ও অস্থিতিশীল পথে ছিল।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও ঋণের ভারে দ্বৈত সংকটে পড়েছে শ্রীলঙ্কা। অর্থনৈতিক সংকট যত বাড়ছে ততই দেশটির জনগণের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, অর্থনীতির এমন পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার ক্রমবর্ধমান কঠিন বৈদেশিক ঋণ সংকটকে আরও জটিল করে তুলতে পারে। মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি’র এক প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
মুডি’স অ্যানালিটিক্সের অর্থনীতিবিদ শাহানা মুখার্জীর মতে, নীতি নির্ধারকরা বৈদেশিক ঋণ পরিশোধ ও দেশের চাহিদা মেটানোর দ্বৈত চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছেন।
দক্ষিণ এশীয় দেশটির পর্যটন খাত থেকে আসা ডলারের প্রবাহ কমে গেছে মহামারিতে। কিন্তু অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এর আগে থেকেই শ্রীলঙ্কার বৈদেশিক ঋণ সর্বোচ্চ ও অস্থিতিশীল পথে ছিল।
ইন্সটিটিউট অব পলিসি স্টাডিস অব শ্রীলঙ্কার নির্বাহী পরিচালক ডুশনি বিরাকুন বলেন, কীভাবে ঋণ শোধ করা হবে তা নিয়ে খুব একটা মাথা না ঘামিয়ে ২০০৭ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা সরকারগুলো বন্ড ইস্যু করে গেছে। এক্ষেত্রে পণ্য ও সেবা রফতানি থেকে আয় নয়, বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ গড়ে তোলা হয়েছিল ধার করে। এতে বড় ধাক্কা খেয়েছে শ্রীলঙ্কা।
ক্যাপিটাল ইকনোমিক্সের এশীয় অর্থনীতিবিদ অ্যালেক্স হোমস বলেন, সরকার বিদেশি মুদ্রা ঋণ পরিশোধে ব্যয় করেছে। কেন্দ্রীয় শ্রীলঙ্কান রুপির দরপতন ঠেকাতে বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ কমাচ্ছে। যা চাপে পড়েছে। এর ফলে খাদ্য আমদানির জন্য দেশটির অর্থনীতিতে বিদেশি মুদ্রা যথেষ্ট পরিমাণে ছিল না। মুদ্রাস্ফীতি দুই অঙ্কে পৌঁছানোর পেছনে এটি একটি কারণ।
পর্যটন নির্ভর অর্থনীতির দেশটি করোনা মহামারিতে বড় ধাক্কা খেয়েছে। মুখার্জী বলেন, শ্রীলঙ্কার অর্থনীতিতে মহামারির প্রভাব ছিল ব্যাপক। গুরুত্বপূর্ণ রাজস্ব আয়ের খাত পর্যটন শিল্প ২০২০ সালের শুরু থেকে কার্যত বন্ধ থাকলে সরকারের আয় চাপে পড়ে। এই সময়ে অভিবাসী শ্রমিকদের রেমিট্যান্স পাঠানোও কমে আসে।